– আল রাহাত
শুনলাম শিক্ষকদের ছাড়া সরকারি আর কোন কর্মকর্তাদের স্যার-ম্যাডাম না ডাকার জন্য বলেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী মহোদয়। একজন শিক্ষক হিসেবে ধন্যবাদ জানাতে আমার অন্তত কোন কুন্ঠাবোধ হচ্ছে না মন্ত্রী মহোদয়কে। ধন্যবাদ মন্ত্রী মহোদয়। তবে মহোদয় নিশ্চয়ই জানেন একই বিসিএসে উত্তির্ন হয়েও একজন প্রশাসন বা পুলিশ ক্যাডার আর একজন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার মধ্যে সামাজিক, অর্থনৈতিক যে দূরত্ব সেটা এই স্যার বা ম্যাডাম ডাক কতটা ঘোচাতে পারবে সে বিষয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। আর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের দুরবস্থায় বা এই স্যার বা ম্যাডাম ডাক কতটা ঘোচাবে সেই হিসেব না হয় পরেই হোক।
ইদানীং টিসিবি পণ্যের ট্রাকের পেছনে লাইনের সারির দীর্ঘতা আর বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়ের বৃদ্ধি এই দুই ইস্যু কেন জানি হর-হামেশায় মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আমি জানিনা শুধু কি আমার নাকি আমার মত তথাকথিত আরো অনেক মধ্যবিত্তেরও খুব ইচ্ছা করে হুট করে এই লাইনে দাঁড়িয়ে পড়তে। কিন্তু টিসিবি-র পণ্য নাকি নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য সীমাবদ্ধ। আচ্ছা মধ্যবিত্ত হতে হলে এখন মাসে কত টাকা আয় করতে হয় এই দুর্মূল্যের বাজারে? কেউ কি জানেন? আমার জানা নেই।
যেহেতু দেশের অধিকাংশ উচ্চশিক্ষিত মানুষই শিক্ষা জীবন শেষে সরকারি চাকরির সোনার হরিণের পেছনে দৌড় শেষে হয়রান হয়ে যদি বেসরকারি একটি চাকরিতে জয়েন করে, তখন মাসশেষে খুব ভাল কপাল হলে তার বেতন জুটে ৩০-৩৫ হাজার টাকার মত (যদিও ১২-১৫ হাজার টাকার চাকরিই এখন সোনার হরিণ)। ধরা যাক, এই ৩০-৩৫ হাজার টাকা কামানো মানুষটাই একজন বেসরকারি মধ্যবিত্ত। আর যে সোনার হরিণের দেখা পায়, সে সরকারি মধ্যবিত্ত। আমরা একজন বেসরকারি মধ্যবিত্তের কথাই আজ বলবো। তো যদি সেই বেসরকারি মধ্যবিত্ত বাসা ভাড়ার জন্য মাসে ১২-১৫ হাজার টাকা খরচ করে, বাচ্চাদের পড়ালেখায় ৩-৫ হাজার খরচ করে, তাহলে বাকি থাকে আর ১০-১৫ হাজার টাকা। আর এই টাকায় এই দুর্মূল্যের বাজারে ঔষুধ, যাতায়াত, সদাই-পাতিতে খরচের পর মাসশেষে বাকি পড়ে পাড়ার মুদির দোকানটিতে।
এদিকে নিম্নবিত্ত বলে পরিচিত একজন রিক্সাওয়ালার মাস শেষে ইনকাম ১৫-২০ হাজার, তার বউ তিন বাসায় বুয়ার কাজ করে পায় ১২ হাজার সাথে দুবেলা খাবার আর তাদের ১২ বছরের বড় ছেলে চায়ের দোকানে কাজ করে পায় ০৬ হাজার আর সাথে তিনবেলা খাবার। অর্থাৎ তার পরিবারের মাসিক আয় ৩৮ হাজার। যেখানে তার বাসা ভাড়া ৫০০০, স্থানীয় সমিতিতে সঞ্চয় বাবদ কিস্তি ৫০০০ ও রিক্সাওয়ালার নিজের খাবার খরচ বাবদ আরো ৫-৭ হাজার ছাড়া আর কোন স্থায়ী খরচ নেই।
তাহলে এই টিসিবির পণ্যের লাইনে একজন বেসরকারি মধ্যবিত্তের কেন দাড়াতে ইচ্ছে করবে না? আর মাসশেষে যদি চাকরির প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হয় এইমাসে বেতন হবেনা, পরে নিয়েন। তাহলে এই নামকাওয়াস্তের মধ্যবিত্তের অবস্থা কেমন হয় তা সহজেই অনুমেয়।
দেশ নাকি মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে শীঘ্রই। তা দেশও যদি উপরে চিত্রিত মধ্যবিত্তের মতই মধ্যম আয় সম্পন্ন হয় তাহলে একজন বেসরকারি মধ্যবিত্ত হিসেবে বা একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কি দশা হবে তা ভাবতেই গা শিউরে উঠে। এই দুর্মূল্যের বাজারে স্যার ডাক শোনার জন্য বেচে থাকতে পারবো তো!?
টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়ে পড়তে ইচ্ছে করলে আমাকে বা তথাকথিত একজন বেসরকারি মধ্যবিত্তকে কি খুব একটা দোষ দিতে পারে এই রাষ্ট্র?
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।